writerfair

রক্তের দাগ

Blood Stains

Abul Hossain Azad

রাত প্রায় দুটো।

প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। পুরো শহর ঝড়ের দাপটে কাঁপছে।

পুরো শরীর কাঁপতে কাঁপতে সুব্রত ছুটে এলো গ্রামের একমাত্র পুরোনো মন্দিরের সামনে। হাত-পা কাদায় মাখা, শার্টে রক্তের দাগ। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না ভালো করে।

তার মাথার ভেতর তখনও ভাইয়ের চিৎকার ঘুরপাক খাচ্ছে—

"সুব্রত, এটা তুই কী করছিস? আমি তোর দাদা!"

কিন্তু তখন তার রাগ মাথায় চেপে বসেছিল। শরীরের রক্ত গরম হয়ে উঠেছিল…

আর এখন? এখন শরীর ঠান্ডা। বুকের ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা লাগছে।

(দুই দিন আগে)

সুব্রত আর অনিরুদ্ধ দুই ভাই। ছোটবেলায় খুব ভালো বন্ধুর মতো ছিল, সবকিছু একসাথে করত। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

বাবা সব সম্পত্তি দুই ভাইয়ের নামে লিখে গেলেও, দাদা অনিরুদ্ধ পুরো জমি দখল করে নিয়েছিল।

— "তোর ভাগের জমিরও আমি দেখাশোনা করছি, চিন্তা করিস না।"

— "কিন্তু দাদা, আমি কি তাহলে ফকির? আমার কোনো অধিকার নেই?"

— "ওসব নিয়ে মাথা ঘামাস না। তোর ভাগ আমি দেখে নেব!"

সুব্রত প্রথমে চুপ ছিল। কিন্তু দিন দিন দাদার অত্যাচার বাড়তে লাগল। জমির ফসল থেকে শুরু করে বাড়ির সব আয়, সব অনিরুদ্ধ নিজের দখলে নিয়ে নিলো।

রক্তের সম্পর্কটা আস্তে আস্তে কালো হিংসায় রূপ নিলো।

সুব্রত কষ্টে থাকলেও কিছু বলত না। কিন্তু সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেল, যখন অনিরুদ্ধ তার বউকে অপমান করল—

— "এই বাড়িতে তোর আর তোর বউয়ের জায়গা নেই! ভাগ এখান থেকে!"

সেদিনই সুব্রত ঠিক করল—এই অন্যায়ের শেষ সে করবেই।

(সেই রাত)

ঘরের আলো তখনও জ্বলছিল। অনিরুদ্ধ বিছানায় বসে হিসেব করছিল জমির আয়-ব্যয়ের খাতা।

পেছনে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সুব্রত।

তার হাতে একটা ভারী লোহার রড।

চোখের সামনে ভেসে উঠল সব অপমান, সব অন্যায়।

রক্ত যখন টগবগ করে ফুটতে শুরু করে, তখন মানুষ আর ভাবে না।

একটা বিকট শব্দ।

তারপর শুধু অনিরুদ্ধের আর্তচিৎকার…

সুব্রত থরথর করে কাঁপছিল। তার হাতে তখন রক্ত লেগে গেছে। নিজের বড় ভাইয়ের রক্ত!

সে পিছিয়ে এলো, দরজার কাছে এসে একবার ঘুরে তাকাল।

অনিরুদ্ধ নিথর হয়ে পড়ে আছে।

(বর্তমান)

সুব্রত মন্দিরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। তার চোখ থেকে অঝোরে জল পড়তে লাগল।

সে কি সত্যিই এটা করল?

একই মায়ের গর্ভ থেকে আসা ভাইয়ের রক্তে নিজের হাত ভিজিয়ে ফেলল?

হিংসা, প্রতিশোধ, ক্রোধ—এগুলো কি রক্তের সম্পর্কের চেয়ে বড় হয়ে গেল?

দূরে পুলিশের সাইরেন বাজতে লাগল।

সে জানে, এই রক্তের দাগ কোনোদিন মুছবে না।

আজ বুঝতে পারল—হিংসা যখন রক্তের সম্পর্কে ঢোকে, তখন রক্ত শুধু সম্পর্ক নয়… খুনের সাক্ষীও হয়ে যায়।

Page No 1