নবাবের দরবারে একদিন হঠাৎ গোপাল ভাঁড় খুবই চিন্তিত মুখে উপস্থিত হলেন।
নবাব বললেন, কী হয়েছে গোপাল? তোমার মুখ এত শুকিয়ে গেছে কেন?
গোপাল দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, হুজুর, পৃথিবী বড়ই বিপজ্জনক জায়গা হয়ে গেছে!
নবাব অবাক হয়ে বললেন, সেটা তো জানি! কিন্তু নতুন করে কী হলো?
গোপাল বললেন, হুজুর, শুনলাম এক নতুন যন্ত্র এসেছে নাম তার 'স্মার্টফোন'!
নবাব কপালে ভাঁজ ফেললেন, সে আবার কী?
গোপাল শ্বাস ফেলে বললেন, এ এক আজব যন্ত্র! এটা নিয়ে সবাই সারাদিন মুখ গুঁজে বসে থাকে, কারও দিকে তাকায় না, কথাও বলে না!
নবাব হেসে উঠলেন, এ তো ভালো জিনিস! শত্রুরা যদি সারাদিন ওতে মুখ গুঁজে থাকে, তাহলে তো যুদ্ধই হবে না!
গোপাল কাঁদো কাঁদো মুখে বললেন, হুজুর, যুদ্ধ না হলেও মহাযুদ্ধ হবে! আমার স্ত্রী কাল থেকে এই যন্ত্র হাতে পেয়েছে, এখন আমাকে দেখেও চিনতে পারছে না!
নবাব এবার সত্যিই চিন্তিত হয়ে পড়লেন।
পরের দিন গোপাল ভাঁড়ের বাড়িতে এক বিশৃঙ্খল অবস্থা!
তার স্ত্রী সকাল থেকে দরজার সামনে বসে স্ক্রিনে আঙুল ঘষছেন, মাঝেমধ্যে হাসছেন, মাঝেমধ্যে রাগ করছেন, আর মাঝে মাঝে বলে উঠছেন, হুম, বেশ ভালো রেসিপি!
গোপাল ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বললেন, সুনয়না, তুমি কী করছ?
স্ত্রী বিরক্ত হয়ে বললেন, গোপাল, দয়া করে বিরক্ত করো না! আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি!
গোপাল মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন, তোমার এত গুরুত্বপূর্ণ কাজটা কী?
স্ত্রী হেসে বললেন, "আমি ফেসবুকে রান্নার ভিডিও দেখছি! এখানে এক চমৎকার আমিষ রেসিপি পেয়েছি!
গোপাল বিস্মিত হয়ে বললেন, তুমি তো নিরামিষাশী!
স্ত্রী গম্ভীর মুখে বললেন, সেটা তো আর ফেসবুক জানে না!
গোপাল দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
এমন সময় এক ছোট্ট ছেলে দৌড়ে এসে বলল, কাকা, কাকা! দাড়ি কেটে ফেলুন!
গোপাল অবাক হয়ে বললেন, কেন?
ছেলেটা উত্তেজিত হয়ে বলল, ফেসবুকে দেখলাম, একটা অ্যাপে দাড়ি থাকলে বয়স দশ বছর বেশি দেখায়!
গোপাল মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন।
গোপাল এবার সিদ্ধান্ত নিলেন, কিছু একটা করতেই হবে। তিনি স্মার্টফোনের ক্ষতি বোঝাতে নবাবের দরবারে হাজির হলেন।
নবাব বললেন, গোপাল, এবার কী সমস্যা?
গোপাল বললেন, হুজুর, মানুষ এই স্মার্টফোনে এতই ডুবে গেছে যে, তারা বাস্তব ভুলে যাচ্ছে! কেউ আমাকে দেখে না, কেউ আমার কথা শোনে না!
নবাব হাসলেন, কেন? আমিতো তোমাকে দেখছি, তোমার কথা শুনছি!
গোপাল গম্ভীর হয়ে বললেন, কারণ আপনি এখনো স্মার্টফোন ব্যবহার করেননি!
নবাব এবার একটু চিন্তিত হলেন। তাহলে করবো না!
গোপাল স্বস্তির শ্বাস ফেললেন। কিন্তু তখনই দরবারের এক পেয়াদা ছুটে এসে বলল, হুজুর, মুশকিল হয়ে গেছে!
নবাব বললেন, কী হয়েছে?
পেয়াদা বললেন, আপনার রান্নাঘরের বাবুর্চি ইউটিউবে নতুন রান্নার ভিডিও দেখে এত মশলা দিয়েছে যে, রান্না বিষাক্ত হয়ে গেছে!
নবাব চমকে উঠলেন, বলো কী!
গোপাল মাথা নাড়লেন, দেখলেন তো, হুজুর? আমি না বলেছিলাম!
নবাব গম্ভীর হয়ে বললেন, ঠিক আছে, এই স্মার্টফোন নামক বস্তুটি বেশি ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইন জারি করব!
গোপাল খুশি হয়ে বললেন, শুধু আইন জারি করলেই হবে না, হুজুর! দরবারের সবাইকে হাতে হাতে চাকু দিন!
নবাব অবাক হয়ে বললেন, চাকু কেন?
গোপাল হাসলেন, যাতে তারা স্ক্রিন থেকে মুখ তুলে নিজের চারপাশটা কেটে কেটে পরিষ্কার করতে পারে!
দরবারে সবাই হেসে উঠল।
নবাব বললেন, গোপাল, তুমি ঠিকই বলেছ! এখন থেকে স্মার্টফোন কম ব্যবহার করব!
গোপাল খুশি মনে বেরিয়ে এলেন। কিন্তু পথে দেখলেন, এক লোক মোবাইল হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কুয়োয় পড়ে গেছে!
গোপাল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমি কিছুই করতে পারব না! এই স্মার্টফোন যুগে বেঁচে থাকা সত্যিই কষ্টকর!
(শেষ)
Page No 1