writerfair

অবশেষে তুমি

Finally You

Abul Hossain Azad

প্রায় বিকেল চার টা। মেহেক রেডি হয়ে নিচে যাওয়ার সময় আদনানের সাথে দেখা।

আদনান কোথায় যাবে জানতে চাইলে মেহেক চুপ করে থাকে। তখনি ইশি আর তার মা এসে বলে বাহিরে নাফিস দাঁড়িয়ে আছে। মেহেক কে নিতে এসেছে। এটা শুনে ' ওহ' বলে আদনান তার রুমের দিকে পা বাড়ায়।

" কীভাবে বলি!!! এনাউন্স করে বললো? যে আমি একটা পর পুরুষের সাথে বাইরে ঘুরতে বের হচ্ছি!!!!!!! তাও যার সাথে যাচ্ছি তার মাথায় কিছু তার ছিঁড়ে গেছে। " বিড়বিড় করে মেহেক বললো।

" ওটা তোর হাসবেন্ড হতে যাচ্ছে ইন ফিউচার।" এটা বলে আদনান চলে গেলো।

মেহেক ভেবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

" কোন ভাই বিয়ের আগে বোনকে এভাবে বের হতে দেয় বুঝলাম না!!!" মনে মনে ভাবলো মেহেক।

ইশি এসে মেহেকের কাঁধে কনুই রেখে বললো_

" ভাইয়া কে বলবা আমার জন্য যেন এতততত্ব গুলা চকলেট পাঠিয়ে দেয় তোমার সাথে করে।না হলে তার বউ এর এই বাড়িতে এন্ট্রি বন্ধ ঘোষণা করা হবে।"

হাত দিয়ে দরজা দেখিয়ে বললো।

" ঠিক আছে শালিকা, আপনাকে চকলেট এর রাজ্যেই পাঠাই দিবো নে।যত ইচ্ছে খাবেন। কি বলেন!!!? "

পিছন থেকে নাফিস বলে উঠলো।

মেহেকের দেরী হচ্ছে দেখে ও বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে বললো।

" হুমমম দুলাভাই ঠিক। এই নেন আপনার বউ নিয়ে যান। অনেক জ্বালাতন করে আমাদের।" মেহেক কে টেনে দরজা অব্দি নিয়ে গেল।

মেহেক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালো ইশিতার দিকে।

" আসতে দে বাসায় পরে মজা বুঝাচ্ছি। জ্বালা কারে বলে কত প্রকার কী কী সব টের পাবি।"

ফিসফিস করে ইশি কে বললো।

" দেখো ভাইয়া কেমন শাসাচ্ছে দেখো!!! এত কিউট বাচ্চাটারে কী হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে দেখো।"

করুণ চাহনি দিয়ে এমন ভাবে বললে যেনো এক্ষুনি চোখের পানি দিয়ে নদী বানাই ফেলবে।

মেহেক ওর অভিনয় দেখে বললো_

" অযথা আমাদের বাড়িতে পরে আছিস। দেশের ক্ষতি হচ্ছে।

এত ভালো একটা অভিনেত্রী আমাদের দেশ মিস করে যাচ্ছে বনু আমার। প্লিজ অভিনয় শুরু কর!!! দেখবি অস্কার টা তুই পাবি।"

" হইছে আপা হইছে।ভাইয়া ভাববে তুমি না আমি তোমাকে জ্বালাই।যাও এবার।"

এই বলে ও নাফিস কে টাটা দিয়ে চলে গেলো।

বাইরে এসে দেখে নাফিস বাইকে উঠতেছে। দেখেই দাঁড়িয়ে পরলো মেহেক।

"কী হলো?" মেহেককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

" আমরা কী এটা তে যাবো? "

মেহেক কিছু টা ইতস্তত করে বললো।

" 'এটা' আবার কোন বাহন? নাফিস কিঞ্চিৎ হেসে বললো।

" বাইকে করে যাবো?" ভ্রু কুঁচকে বললো।

"না আমরা উড়োজাহাজে যাবো। উঠে বসো।"

মেহেক ঠায় দাঁড়িয়ে।

"এখন থেকে যতক্ষণ লেট করবা আসার সময় আমি ঠিক ততখানিই লেট করে বাড়ি নিয়ে আসবো। বাকীটা তোমার ইচ্ছে। "

নাফিস হেলমেট টা হাতে নিয়ে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো।

নাফিসের কথা শুনে মেহেক বোবা হয়ে গেছে। নীল কখনোই এমন করতো না আর করলেও কখনো মেহেকের সাথে জিততে পারতো না।

এখানে সে নিরুপায় পায়ে বাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

বাইকের কাছে আসতেই নাফিসের হাতে থাকা হেলমেট টা মেহেক কে পরিয়ে দিচ্ছে ।

মেহেক ফ্রিজ। শিরদাঁড়া বেয়ে যেন কি নেমে গেল। আপনাআপনি পা গুলো জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। নাফিস কখন যে হেলমেট পরিয়ে গিয়ে বাইকে বসেছে তার হুশ নেই।

"ম্যাডাম এখানে কী ফ্রিজ হয়ে থাকার কোনো প্রতিযোগিতা চলছে?"

মেহেককে স্থির অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলো।

"মানে?" মেহেকের হুশ ফিরলো।

প্রায় পাঁচ মিনিট হয় এমনি দাঁড়িয়ে।

" এমন কোনো প্রতিযোগিতা হলে ফার্স্ট প্রাইজটা আপনি ছাড়া কেউ নিতে পারবে না কনফার্ম। "

মেহেক বোকার মতো চেয়ে আছে।

" এবার উঠে বসুন।"

মেহেক আর কিছু না বলে বাইকে উঠে বসলো।

" আমি কিন্তু ফুল স্প্রীড রাইডার, পড়ে গেলে বেশী কিছু হবে না আর কী। এই ধরুন চামড়া ছিলে যাবে না হয় একটা দুইটা হাড্ডি ই ভেঙে যাবে। আর রাস্তায় তখন গাড়ি থাকলে তার সামনে পরে গেলে ওপর ওয়ালার কাছে চলে যাবেন। এই আর কী।"

মেহেক পিছনে বসে আছে না ধরে।তাই তার উদ্দেশ্যে রীতিমতো একটা লেকচার দিল নাফিস।

মেহেক আর কথা বাড়ালো না।বাড়িয়েও লাভ নেই।এনার সাথে তর্কে জেতা ইম্পসিবল।

নাফিসের কাঁধে হাত রেখে তাকে ভালো করে ধরে বসলো।

বাইক স্টার্ট দিলো। রিকশায় পনেরো মিনিট মতন রাস্তা।

বাইকে গেলে সাত আট মিনিট মতন লাগবে।

কিছু দূর যাওয়ার পর মেহেক বিরবির করে বললো যেনো নাফিস না শুনে_

"এই নাকি ফুল স্প্রীড বাইক রাইডার,সাইকেল ও এর থেকে জোরে চলে।"

"এলাকায় জোরে বাইক চালানো ঠিক না ম্যাডাম।আর পিছনে এত সুন্দর মেয়ে থাকলে তো আরো না। "

মেহেক কে বিরবির করতে দেখে বললো। আসলে মেহেকের বিরবির করে বলা কথা নাফিস অলরেডি শুনে নিয়েছে। ও ইচ্ছে করেই এত ধীরে ধীরে চালাচ্ছে।

" এভাবে চললে আমরা যাবো কখন আর বাসায় ফিরবো কখন?এখানেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে।"

মৃদু স্বরে কথাটা বলে ওর কাঁধ ছেড়ে বসলো।

নাফিসের এটা মোটেই ভালো লাগলো না।সে বাইকের স্পীড বাড়িয়ে দিলো।সাথে সাথে মেহেক আবার ওকে জড়িয়ে ধরে বসলো। নাফিস এক পেশে হাসলো।

"সন্ধ্যা হোক,রাত পেরিয়ে ভোর হোক,সবাই জানে আপনি আমার।"

মেহেকের আর বলার কিই বা থাকবে এরা শুনে। ও তো অলরেডি হার মেনেই নিয়েছে।

পাঁচ মিনিট পর পার্কে এসে পৌঁছালো। পার্ক টা বিশাল। প্রচুর মানুষ। তারা গিয়ে একটা কফি শপে বসলো।

মেহেক ভেবেছিল নাফিস তার সামনা সামনি বসবে। কিন্তু না,নাফিস কে বুঝা ওর পক্ষে সম্ভব না।নাফিস পাশে এসে বসেছে।

দুই টা কফি অর্ডার করলো। তারপর টেবিলে হেলে গালে হাত দিয়ে তাকালো মেহেকের দিকে। অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি যেন স্থীর হয়ে আটকে গেছে।

চোখে চোখ পরতেই মেহেক অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নিলো।খানেক বাদে আবার নাফিসের দিকে তাকালে তখন ও সে তার দিকে ই তাকিয়ে।

ইতস্তত হয়ে আলতো ঢুক গিলে মেহেক মৃদুস্বরে বললো_

" এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?"

নাফিস কিছু বলল না।

" কি হলো আপনার? কি দেখছেন? "

" আমার বউকে।" নিরদ্বিধায় উত্তর দিল নাফিস।

" এভাবে দেখার কি আছে?" চোখ নামিয়ে বললো। বুঝাই যাচ্ছে লজ্জা পেয়ে গেছে।

" তাহলে অন্য কাউকে দেখি!!! ঐ যে দূরে একটা মেয়ে বসে এদিকে ই তাকিয়ে আছে। তাকে হায় বলি কেমন?"

মেহেকের দিকেই তাকিয়ে এমনি কথা গুলো বলল মেহেকের রিয়াকশন টা দেখার জন্য।

"মোটেই না। অন্য কাউকে দেখা বারণ আজকে থেকে। আমি ছাড়া আপনার কাছে আর কেউ যেন না আসে। "

মেহেক দ্রুত গতিতে নাফিসের দিকে আঙুল পয়েন্ট করে বলে এক শ্বাসে কথা শেষ করে নিজেই থ্ব হয়ে গেল।

নাফিস এখনো আগের পজিশনে ই বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর কেউ এদিকে তাকিয়ে থাকবে তো দূরের কথা আশেপাশে ও কোনো মেয়ে নাই।

নাফিস সোজা হয়ে বসে ওর হাতটা ধরে ওর বুকে রেখে বললো_

" হৃদয়স্পর্শী মন থেকে মুছে যাওয়া মানে হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়া।"

" ভালোবাসেন আমায়?" নাফিসের চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো।

" না বাসি না।"

মেহেকের মুখ টা মলীন হয়ে গেলো।

" আমি আপনাকে অসম্ভব ভালোবাসি,আপনাকে পাওয়ার জন্য আপনার নিজেকে স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় মেলে ধরবো যেন আপনার প্রতি থাকা মায়া,ভালোবাসা, আর আপনার নামে লিখা আমার নিঃশ্বাস আপনি দেখতে পারেন।

ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে জন্ম নিলেও যেন আবার আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য হোন।"

নাফিসের কথাগুলো শুনে মেহেক চোখ বন্ধ করে ফেলে। তার এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না সে।

হঠাৎ কারো আগমনে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে দুজনে। নাফিস এখনো মেহেকের হাত ধরে আছে।

সামনে তাকাতেই মেহেক চমকে উঠে। নাফিসের হাত থেকে হাত সরিয়ে নিতে চাইলে নাফিস আরো শক্ত করে ধরে।

Page No 1