writerfair

রাজকুমার বাবুর চিকিৎসা

Treatment of Rajkumar Babu

Sayed Hasmot Alli

প্রথম অংশ

বিংশ শতকের গোড়ার দিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। তখন নড়াইল জেলার টাবরা গ্রামের মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে রাজকুমার বিশ্বাস এম এল এফ পাশ করে চিকিৎসা সেবা শুরু করেন। খুব মেধাবী বিবেক সম্পন্ন নব্য ডাক্তার রাজকুমার। তিনি অল্পদিনের মধ্যে ডাক্তার হিসেবে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। যে কোনো স্বাস্থ্যগত অসুবিধা দেখা দিলেই সাধারণ মানুষ রাজকুমার বাবুর স্মরণাপন্ন হয়। কিন্তু কোনো কোনো রোগ আরোগ্যে তিনি অক্ষম। ঢাকা, কোলকাতার বড় বড় ডিগ্রীধারী ডাক্তাদের সাথে পরামর্শ করেও এসব রোগীর চিকিৎসায় কোনো সমাধান পান না।
একদিন হোগলা ডাঙ্গা গ্রামের জগদীশ মাঝি তার ১০ বছর বয়েসি একমাত্র কন্যাকে নিয়ে এসেছেন তালবাড়িয়া গ্রামে আব্দুল হামিদ মওলানার কাছে। মেয়েটি মাঝে মধ্যে ভুল বকে, গীতা পাঠ করে, কখনও কখনও কোরআন শরীফ পাঠসহ নানা তালবাহানা করে। জগদীশ মাঝি কন্যাকে যশোর, খুলনা ডাক্তার দেখানো শেষ করে তিন তিন বার কোলকাতায়ও ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হয়নি। সর্বশেষে উপায়হীন হয়ে মওলানা সাহেবের কাছে তদবির নিতে এসেছেন। একই সময় রাজকুমার বাবু মওলানা সাহেবের ভাইপোর জ্বর কাশির জন্য সেই বাড়িতে গিয়েছেন। তিনি জগদীশ মাঝিকে জিজ্ঞেস করেন,
কি ব্যাপার কাকা এখানে?
জগদীশ বাবু বললেন,
অনেকদিন যাবৎ কোলকাতা পর্যন্ত ডাক্তার দেখালাম কোনো কাজ হলো না। এখন দেখি মওলানা সাহেবের তদবিরে পরমেশ্বর যদি দয়া করেন। তাই এখানে এসেছি।

কৌতুহলি রাজকুমার বাবুও তাদের সাথে অপেক্ষা করেন। বেশ কিছুক্ষণ পর মওলানা সাহেব কাচারি ঘরে তদবির গদিতে সমাসীন হন। রোগীকে ডাকলেন কিন্তু রোগী চুপ, কোনো কথা বলছে না। তখন তার বাবা জগদীশ বাবু বিস্তারিত খুলে বলার পর মওলানা সাহেব এছেম কালাম পড়ে ঘরের মেঝেতে বৃত্তাকারে কাচি দিয়ে দাগ দিলেন। এরপর রোগীকে বৃত্তের মাঝখানে বসিয়ে কোরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াত পড়তে শুরু করেন। এক পর্যায়ে এক গ্লাস পানিতে ফুঁ দিয়ে রোগীর শরীরে ছিটালেন। সাথে সাথে তার চোখ মুখের চাহনি ও শরীরের বলিষ্ঠতার পরিবর্তন আসলো। তখন মাওলানা সাহেব বললেন,
কে তুই তোর পরিচয় দে?
রোগীর মুখ দিয়ে বলতেছে, আমার নাম ইলিং। আমার পূর্ব পুরুষের বসবাস কৈকাফ শহরে। আমি এ অঞ্চলে বিচরণ করি। একে দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। তাই এর সাথে একটু বন্ধুত্ব করার জন্য আসি। আমি ওর কোনো ক্ষতি করবো না। আমাকে বিরক্ত করতে নিষেধ করে দেন!
রোগীর কন্ঠস্বর সাধারণ স্বর থেকে অনেক পরিবর্তিত। সে যে নিজে কথা বলছে তাকে দেখে মনে হচ্ছে না। খুবই আত্ম ভুলো সহজ সরল একটা মেয়ে। এরপর মাওলানা সাহেব আবার বললেন,
তোকে এর কাছ থেকে এখনই চলে যেতে হবে। আর কোনো দিন আসবি না!
সে খুব অনুনয় বিনয় করতে থাকে। কিছু সময় পর মাওলানা সাহেব রাগান্বিত অবস্থায় তাকে যাওয়ার কথা বললেন। তাতেও যখন কোনো কাজ না হয়, তখন মাওলানা সাহেব সাদা কাগজে কি যেনো এছেম কালাম লিখলেন। তারপর ঐ লেখা কাগজটি আগুনে পোড়াতে থাকলেন। তখন রোগির মুখে বলছে,
চলে যাচ্ছি! চলে যাচ্ছি!
বলে চেঁচাতে থাকে। তবুও মাওলানা সাহেব কাগজটা পুড়ে ফেলেন। এরপর মাওলানা সাহেব বললেন,
তুই কী নিয়ে যাবি? উত্তরে সে মেয়েটার একটা ওড়না নিয়ে যেতে চায়। মাওলানা সাহেব বললেন,
না ওসব তোকে নিতে দিব না। তুই পানির কলস নিয়ে যা!

পূর্বেই একটা পিতলের পানি ভরা কলস পাশে রাখা ছিলো। সেটা মাওলানা সাহেব রোগীর পাশে রাখতে বলেছিলেন। রোগী তখন পানি ভর্তি পিতলের কলস দাঁত দিয়ে কামড়িয়ে ধরে কিছুদূর যাওয়ার পর বেহুশ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এর আধা ঘন্টা পর মাওলানা সাহেবের পানি পড়া চোখে মুখে ছিটে দেওয়াতে রোগী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক সুস্থ হয়ে উঠে। অতঃপর মাওলানা সাহেবকে রাজকুমার বাবু জিজ্ঞাসা করেন, হুজুর এসব কি? আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন!
মাওলানা সাহেব বললেন,
মেয়েটাকে জ্বীনে আছর করেছে। ইসলামের পরিভাষায় জ্বীন বলে। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক জ্বীনের কথা উল্লেখ করেছেন। সৃষ্টি জগতে যত জীবের জন্ম হয়েছে তার মধ্যে শুধু মানুষ এবং জ্বীনকে বিবেক নামক স্বাধীনতা তিনি দিয়েছেন। তাই এই দুই জীবের জীবন কর্মের হিসাব দিতে হবে। এই জীবন শেষে মৃত্যুর পর কৃতকর্মের ফল অনুসারে পরবর্তী জনমে পতিত হবে। আখিরাতে সে পরম সুখে থাকবে অথবা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। সনাতন মাইথোলোজিতে বলা হয় অশুভ আত্মা বা ভূত। মানুষের অপমৃত্যু হলে আত্মা স্বর্গ কিংবা নরক কোথাও যেতে পারে না। মর্ত্ত ভূমিতে বিচরণ করতে থাকে। সে সব আত্মা অসহায় হয়ে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে মানুষের উপর ভর করে তৃপ্তি পায়। ত্রিপিটক ধর্মীয় বুদ্ধিষ্টদের মতামতের সাথে সনাতনি হিন্দুদের মতামতের সামান্য পার্থক্য থাকলেও একই রকম বলা হয়। আর ইঞ্জিল কিতাবধারী খ্রিষ্টানদের সাথে এ বিষয়ে অনেকটাই ইসলামের মিল পরিলক্ষিত হয়। এভাবে বেশ কিছু সময় মাওলানা সাহেবের সাথে ডাক্তারের কথা হয়। তিনি এই বিষয় চিন্তা করতে করতে বাড়ি ফিরেন। বাড়িতে গিয়ে দেখেন এক বৃদ্ধা তার তরুণী কন্যাকে নিয়ে ডাক্তারের অপেক্ষায় বসে আছেন। তিনি ভিতর বাড়ি গিয়ে দ্রুত বাহিরে যাওয়া জামা পরিবর্তন করে, চেম্বারে আসেন। এসে রোগীকে ডাকেন এবং রোগীর লক্ষণ দেখে শুনে বুঝলেন। সকালে তিনি মাওলানা সাহেবের বাড়িতে যে রোগী দেখেছিলেন এটাও তেমন। রাজকুমার বাবু চিন্তিত হয়ে পড়লেন। ডাক্তারী চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাকে ব্রেনের সমস্যা বলে আখ্যায়িত করে। কিন্তু বাস্তবে তিনি যা দেখছেন, এটা ব্রেনের কোনো রোগ না। এখন
তিনি কী করবেন? রোগীর বাবাকে ডেকে বললেন, বাবু আপনার কন্যাকে তালবাড়িয়ার আব্দুল হামিদ মাওলানা সাহেবের কাছে নিয়ে যান।

ডাক্তার মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন। ধর্মীয় আদলে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা শিখবেন। সৃষ্টিকর্তা যেহেতু আছেন এবং তিনি সব জাতি সৃষ্টি করেছেন কাজেই তাদের সব বিমারেরও তিনি নিরাময়ের ব্যবস্থা রেখেছেন। পূর্বে মনের কৌতূহলে তিনি কিছুটা আরবি, উর্দু ভাষা শিখেছিলেন।
চিকিৎসা বিষয়ে পড়াশুনা করার কথা বলে তিনি কোলকাতা গেলেন। কোলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার একজন বাঙালি শিক্ষকের কাছে দুই বছর তিনি শিক্ষা নিলেন। আরবি ভাষাসহ কোরআন শরীফ তরজমা, ব্যাখ্যার উপর লেখাপড়া করে জ্বীন তাড়ানোর এছেম কালাম শিখলেন। তারপর বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর থেকে তার কাছে বেশির ভাগ রোগী জ্বিনে ধরা, ভূতে ধরা আসতে থাকে। এভাবে বেশ কয়েক বছর এ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, কবিরাজী, ঝাড়ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা করেন। যে রোগির যেটা প্রয়োজন তার সেই চিকিৎসাই তিনি দেন। ইতিমধ্যে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে। ছোট ভাইও বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। বিধবা মা খুবই উৎগ্রীব ডাক্তার বাবুকে বিয়ে
দেওয়ার জন্য। বিভিন্ন এলাকায় স্বজাতির মেয়ের খোঁজ খবর চলতেছে। সহসা ডাক্তার বাবুর ভাইয়ের কাছে রায়বারের মাধ্যমে একটা প্রস্তাব আসে। রায়খালী গ্রামের বৈদ্যনাথ ঠাকুরের কন্যাকে ঠাকুর মহাশয় তার সাথে বিয়ে
দিতে ইচ্ছুক। সুশ্রী, সুন্দরী কন্যা। বাবা সৌখিন লেখাপড়া জানা ভদ্রলোক। যদিও ঠাকুর সম্প্রদায়ের লোক কিন্তু তিনি কোথাও পূজা অর্চনা করতে যান না। নিজের বাড়িতেই নিজেদের পুজা অর্চনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তাঁর দুইটা কন্যা। কন্যারা হাইস্কুল পাশ করে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশোনা করে। বয়সও হয়েছে। যদি কোনো ভাবে রাজকুমার ডাক্তারের মত ছেলের সাথে বিয়ে হয় তাহলে খুবই ভালো হয়। তিনি ভাবেন,
জাত কূল টেনে আর কি হবে। তা ছাড়া আমরা তো নমসুদ্র বাড়িতেও পূজা করতে যাই। একই সাথে মা দূর্গা, মা কালি, জগন্নাথ, লক্ষ্মী, স্বরসতি সবাইকেই পূজা করি। ভোগের আয়োজক ওরা। ওদের শ্রম, ওদের অর্থে ভোগের জোগাড়। আমরা শুধু বাহক। সবাইতো এক সাথে একই কাজে জড়িত। তাহলে অসুবিধা কোথায়!
এসব ভাবনায় বৈদ্যনাথ বাবু নিজেই রায়বার পাঠিয়েছেন। এ বিষয়ে ডাক্তারের ভাই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে। ডাক্তার বাবুও সম্মতি জ্ঞাপন করেন। বৈদ্যনাথ বাবুর বড় কন্যা শিউলিকে তিনি চেনেন এবং বেশ কয়েকবার আলাপও হয়েছে। মেয়েটি খুবই ভালো। যেমন সুশ্রী তেমন সদালাপি। কয়েক বছর পূর্বে প্রতিমাসে মাসেই তার তলপেটে ব্যথা হতো। এজন্য ঠাকুর মহাশয় অনেক ডাক্তারের কাছে প্রায় একবছর চিকিৎসা করিয়েছেন। ভালো হয়নি। তিনি একদিন নড়াইল হতে ফেরার পথে ভবানীপুর রাস্তার পাশে এক গাছের ছায়ায় বসে কন্যার অসুখের কথা রাজকুমার ডাক্তারকে বলেন। তিনি বলেছিলেন,
এরপর পেটে ব্যথা শুরু হলেই আমার কাছে পাঠাবেন।
কিছুদিন পর এক সকালে ঠাকুরঝি মাতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজকুমার ডাক্তারের বাড়িতে আসেন। ডাক্তার সবকিছু রোগীর মুখ থেকে জেনে ঔষধের ব্যবস্থা করে দেন। এবং রোগীকে বলেন,
দুই মাস পর ঠিক এই সময় তোমাকে আসতে হবে। আশা রাখি আর কোনো দিন এই পেট ব্যথা হবে না।
নিয়মতান্ত্রিক ভাবে শিউলি পরপর দুই মাস এসে ঔষধ নিয়ে যায়। তারপর আর কোনো দিন পেটে ব্যথা হয়নি।
গ্রামের নমসুদ্র সমাজ পতিরা যখন এই বিয়ের আলোচনার কথা শোনেন। তখন রাম রাম বলে ডাক্তারের পরিবারকে ভৎসনা করে।
ঠাকুর ব্রাহ্মণরা দেবতা তুল্য। স্বর্গের দেব-দেবীরা আমাদের পূজা গ্রহণ করেন না। আমরা নমসুদ্র অস্পৃশ্য। এই অস্পৃশ্য জাতের ঘরে বৌমা হয়ে যদি ঠাকুর ব্রাহ্মণের কন্যা আসে, তাহলে আমাদের গোটা জাতির অমঙ্গল হবে! রাম রাম এ কাজ কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে গ্রামের সমাজপতিদের ডাকা হয়। সেখানে রাজকুমারের ভাইকে
জানিয়ে দেওয়া হয়, সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত। পরিস্থিতিতে ডাক্তারের মা ও ভাই এই বিয়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। এদিকে রাজকুমার বাবু এই বিয়ে করতে আরো বেশি ঝুঁকে পড়েন। কন্যা শিউলির সাথে ইতিমধ্যে তিনি যোগাযোগ করে বিস্তারিত বলেছেন। এক পর্যায়ে বৈদ্যনাথ ঠাকুর মহাশয়কে শ্বশুরের মর্যাদায় কথাবার্তা বলেন। শুরু হয়ে যায় পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্দ্ব। এভাবে দোটানায় কিছুদিন চলার পর, ডাক্তার বাবু সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জীবনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হবেন না। বৃদ্ধা মাও নতুন বৌমা দেখার আশা ছেড়ে দিয়েছেন। ভাইসহ প্রতিবেশি আত্মীয় স্বজন বলে বলে নিরাশ হয়েছে। এরপর সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে ডাক্তার বাবু গোপালগঞ্জের উড়াকান্দি এলাকায় এক কবিরাজের কাছে খুবই নিষ্ঠার সাথে মন্ত্র শেখেন। এবং সাপে কাটা রোগীকে মন্ত্রদ্বারা চিকিৎসা করেন।
 

Page No 1


দ্বিতীয় অংশ

ডাক্তার রাজকুমার বিশ্বাস কোনো বিশেষ ডিগ্রীধারী ডাক্তার হতে পারেননি। কিন্তু তার মেধা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির বলে সব রকম চিকিৎসা মোটামুটি আয়ত্ব করেছিলেন। সার্বক্ষণিক রোগী চিকিৎসা নিয়েই কাটতো তার দৈনন্দিন জীবন। দিনরাত তার কাছে একই রকম। দেখা গেছে সকালে রোগীর ভিড়ে নাস্তা খাওয়া জোটে না। দুপুরে খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইতিমধ্যে মুমূর্ষ রোগী এসে হাজির। আবার রাতে একটু ঘুমের ভাব হয়েছে এমন সময় লোকজন এসে ডাকাডাকি করছে, বাবু একটু উঠেন, আমাদের খুব বিপদ!
জীবনটা একেবারে ইঞ্জিনের মত হয়েছে। সাধ আহ্লাদ হাসি রহস্য সব ভুলে গেছেন। একদিন যশোর জেলার মসিহাটি গ্রাম হতে একটা সাপে কাটা রোগী খুব সকালে এসে হাজির। ডাক্তার তখন ইসলাম ধর্মের পবিত্র কোরআন শরীফের তত্ত্ব ব্যাখ্যা নিয়ে ব্যস্ত। রোগীর নাম পিতা মাতার নাম জেনে আসার জন্য বাড়ির কাজের লোক নগেন বিশ্বাসকে পাঠান। যথারীতি নগেন নাম ধাম শুনে রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আসেন। তিনি সাপে কাটা রোগীর কাছে না গিয়ে মন্ত্রবলে দূরে থেকে চিকিৎসা করেন। রোগী যেখানে থাক না কেন শুধু নাম, পিতা মাতার নাম বললেই চলে। আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। নগেন একথা জানে তাই রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেছে।
বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে তিনি গোসলের জন্য পুকুরে যাচ্ছেন। চেম্বারের দিকে তাকিয়ে দেখেন, তিন/চারজন লোক বসে আছে। তাদের কাছে জানতে চাইলেন, আপনাদের কি অসুবিধা?
বৃদ্ধ বলেন,
বাবু আমার ছেলেকে চার মাস আগে সাপে কেটেছিলো। সে জীবনে বেঁচে গেছে কিন্তু সুস্থ হতে পারেনি। আমরা সকালে এসেছি আমাদের একটু দয়া করেন। মনিরাম পুরের মশিহাটি হতে ভোর রাতে রওনা করে হেঁটে এসেছি। এখন দুপুর একটা বাজে কিছুই খাইনি।
চোখ মুখ শুস্ক। কথা বলার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন অথচ আমাকে কেউ বলেনি! এটা খুবই অমানবিক! তাৎক্ষণিক তিনি ভিতর বাড়ি গিয়ে চিড়ে, মুড়ি, গুড় এনে তাদের খাবার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে রোগীর ভিড় থাকায় তাদের সাথে নিরিবিলি কথা বলার সুযোগের জন্য রাতে থেকে যাওয়ার অনুরোধ জানান। রাত দশটা বাজে এমন সময় রোগীর বিস্তারিত তথ্য জানার পর তিনি বলেন, রোগীর সাপে কাটা বিষ ছাড়াও তার শরীরে অন্য সমস্যা আছে। তাকে কম পক্ষে তিন সপ্তাহ প্রতি রাতে তদবির করতে হবে। প্রয়োজনে সময় আরো বাড়তে পারে। একথা শুনে রোগীর বাবা নিমাই বিশ্বাস খুবই চিন্তিত। য প্রায় এক মাস!
ছেলেকে কোথায় রাখবে কি খাওয়াবে। নিজের বাড়ি অনেক দূরে। কাছে কোনো আত্মীয় স্বজনও নেই। অন্যদিকে ডাক্তারের বাড়ি থাকা খাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় ডাক্তার বাবু মায়ের সাথে আলোচনা করলে, তিনি বলেন, পাশে তোমার জ্যাঠার একটা ঘর ফাঁকা পড়ে আছে। ইচ্ছা করলে ঐ ঘরের বারান্দায় থাকতে পারবে। রান্না করে খেতে হবে। রান্না ঘরও আছে।
নিমাই বিশ্বাস ছেলেকে রেখে সকাল সকালেই বাড়ি যান। চাল, ডাল, হাড়ি কড়াই সাধারণ ভাবে রান্না খাওয়ার জন্য যা না হলে নয় এবং বিছানাপত্র নিয়ে আসেন। ছেলেকে গোছগাছ করে দিয়ে তিনি আবার চলে যান। রোগী হিমাংশু বিশ্বাসকে প্রতিরাতেই ডাক্তার ঝাড় ফুঁক দিতে থাকেন। তিনদিন পর নিমাই বিশ্বাস ছেলেকে দেখতে আসেন, সাথে আসে কন্যা ঝরণা বিশ্বাস। বাবা মেয়ে হিমাংশুকে দেখে খুবই চিন্তিত।
যে কখনো কলস থেকে এক গ্লাস জল ঢেলে খায়নি সে এখন একাকি রান্না করে খাচ্ছে। প্রতি রাতেই বিছানা তৈরী করে ঘুমাচ্ছে। ভাইটি আমার একেবারেই শেষ হয়ে গেছে! এসব বলে ঝর্ণা বিশ্বাস কেঁদে ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
দুই ভাই বোন কান্না কাটির পর বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। বোন ভাইয়ের সেবা করার জন্য সেখানে থেকে যায়। সকাল বিকাল দুই বেলা রান্না খাওয়া ছাড়া ঝর্ণার আর কোনো কাজ নেই। তাই সুযোগ পেলেই ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে বসে। ডাক্তারের সাথে রোগীর আলাপ শোনে। কাকে কি চিকিৎসা দেয় তা দেখে। ঝর্ণা খুলনা শহরের দৌলতপুর বিএল কলেজে আইএ ক্লাশে পড়ে। মেধাবী ছাত্রী সাধারণ জ্ঞানেও ভালো। সপ্তাহ গত হতে না হতেই সে আলমারী থেকে ডাক্তারকে ঔষধ এনে দেয়। বিভিন্ন রোগ সম্পর্কেও ডাক্তারের সাথে তার কথা হয়। ডাক্তার চেম্বারে যাওয়ার পূর্বেই ঝর্ণা প্রেসক্রিপশনের কাগজের উপর রোগীর নাম, বয়স, অসুবিধার কথা সুন্দর করে লিখে রাখে। আচমকা একজন সহযোগী পেয়ে ডাক্তার খুবই খুশি। বিকেলে যখন রোগীর ভিড় না থাকে, তখন বিভিন্ন আলাপ চারিতার মাঝে মাঝে বেশ হাসি তামাশা চলে। আবার দেখা যায় প্রায় প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ার পর ঝর্ণা ডাক্তারের মায়ের রান্না ঘরে গিয়ে নতুন নতুন নাস্তা তৈরি করে। বিকেলে যখন রোগী না থাকে, তখন ডাক্তারের সামনে সেগুলো নিজেই নিয়ে আসে। ডাক্তার খাইতে আপত্তি করলে ঝর্ণা জোরপূর্বক খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে তিনি অখুশি হলে ঝর্ণা তার মায়ের কাছে নালিশ করে।
আপনি যখন রোগীদের তিতা কষ্টা গাদা গাদা ঔষধ দেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও রোগীদের তা গিলতে হয়। কারণ তাদের সুস্থতার জন্য এতে কোনো ছাড় হয় না। এখন আপনি এসব খাবেন সুস্থ থাকার জন্য, এতেও কোনো ছাড় হবে না। কারণ আপনি সুস্থ না থাকলে রোগীরা সুস্থ হতে পারবে না। আগে আপনার সুস্থ থাকা প্রয়োজন।
ঝর্ণার যুক্তি ডাক্তার বাবু খন্ডাতে পারে না।
অনেক দিনের শুস্ক বৃক্ষে জল পেয়ে দুই একটা করে পাতা গজাতে শুরু করেছে। যত দিন যাচ্ছে ততো ঝর্ণা বিশ্বাসের প্রভাব বেড়ে যাচ্ছে। ডাক্তার বাবু একদিন দুপুর বেলা ঔষধ কেনার জন্য লোহাগাড়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঝর্ণা বলে,
আমিতো কোনো দিন লোহাগাড়া যাইনি। আমাকে একটু সাথে নিতে পারবেন?
তার কোনো কথায় এখন আর তিনি না বলে পার পাননা। যেভাবে হোক সে হ্যাঁ বলিয়েই ছাড়ে। তিনি বলেন,
চলো যাই। ঝর্ণা মোটামুটি সাজগোজ করে ডাক্তার বাবুর সাথে লোহাগাড়া যায়। দুইজনে একসাথে ঔষধ পত্র কেনার পর সে তাকে বলে,
চলেন একটু কাপড়ের দোকানে যাই।
কাপড়ের দোকানে গিয়ে ঝর্ণা পছন্দ মত সাদা রংয়ের ভিতরে হালকা সাদার জল ছাপ একটা শাড়ি, গাড়ো কলাপাতা রঙের একটা ফুলশার্ট ও একটা মাচরাইল ঝলোকি লুঙ্গি কেনে। ডাক্তার জানতে চায়,
তুমি এসব কার জন্য কিনছো?
মেয়েদের কাছে সব সময় সব কথা জানতে চাইতে হয় না ডাক্তার বাবু! ডাক্তার কিছু সময় পরে বলেন,
এবার আমার সাথে একটা দোকানে চলো। সেখানে গিয়ে আমি যা বলবো তা শুনতে হবে।
দুই জনে হরিপদ ময়রার ঘরে গিয়ে দই মিষ্টি খেয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসে। পরদিন সকালে ডাক্তার বাবু চেম্বারে বসলে ঝর্ণা নগেন কে নিয়ে ডাক্তার বাবুর ঘরে ঢোকে।
 

ঘরের সব জায়গায় ইঁদুরের বিষ্টার দূর্গন্ধ! ডাক্তার বাবুর পরিহিত সব জামা কাপড় বিছানাপত্র বাহিরে বের করে। সেগুলো সোডা মাখিয়ে গামলা বালতি ভরে রাখে। দুপুর বেলা নগেন কে অনুরোধ করে সেগুলো পুকুর থেকে ধুয়ে নিয়ে আসতে। ডাক্তার দুপুর বেলা ঘরে এসে দেখে ঘরে পড়ার কোনো কাপড় নেই। ঘটনা মায়ের কাছে জানতে চাইলে মা বলেন,
আমি কিছু জানি না। ঝর্ণা আর নগেন ঐ ঘরে ঢুকেছিল।
ঝর্ণাকে ডাকলে সে লোহাগাড়া থেকে কেনা সেই জামা ও লুঙ্গিটি নিয়ে হাজির হয়। ডাক্তার বলেন,
ঝর্ণা এসব কি হচ্ছে?
ঝর্ণা বলে,
ডাক্তার বাবু আপনার এত বুদ্ধি জ্ঞান! রোগীর কথা শুনে, না দেখেই তার ভিতরের রোগ বুঝে ফেলেন, আর এসব বোঝেন না? ভালো জিনিসকে ভালো আবরণ দিয়ে রাখতে হয়। তা না হলে ভালো জিনিসের ভালো আকর্ষণ থাকে না।
তিনি স্ট্যাচু হয়ে ঝর্ণার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সে তখন আবার বলে,
আমার কথা বোঝেননি? আপনি খুব ভালো ডাক্তার! আপনার বেশভূষা বিছানাপত্র থাকতে হবে চকচকে ঝকঝকে। তাই সব ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি। আর স্নান সেরে চেম্বারে যাওয়ার সময় এই লুঙ্গি ও জামাটা পরে যাবেন। ভালো মানাবে।
তাৎক্ষণিক ডাক্তার বাবুর মাকে মাসিমা বলে ডেকে ঝর্ণা নতুন শাড়ি হাতে দিয়ে বলেন, আপনি স্নান করে এই শাড়িটা পরবেন!
ডাক্তার বাবু ও তার মা হতবাক।
মাত্র ১৯ দিনে ঝর্ণা এ বাড়িতে এসে একেবারে সব দখল করে ফেলেছে! সে যা বলছে আমরা তাই শুনছি। কি সাংঘাতিক মেয়ে! রান্না বান্না, খাওয়া দাওয়া, ঘর গোছানো, চেম্বারে সহযোগিতা সব জায়গায় ওর পদচারণা।
মা ছেলে দু'জনই ভিতরে ভিতরে ঝর্ণার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে। ওদিকে হিমাংশুর চিকিৎসা একুশ দিন পার হয়ে তেইশ দিনে পড়েছে। হিমাংশু অনেকটা সুস্থ হয়েছে। এখন আর মাথা ঘোরে না। হাতে পায়ে সামান্য ঝিনঝিন করে। তুলনামূলক ঘুম বেশ হচ্ছে। তবে আরো বেশি ঘুম হওয়া প্রয়োজন। ঝাড় ফুঁকের সাথে সাথে তিনি তাকে খাবারের ঔষধ সহ সকাল বিকাল ব্যায়ামের ব্যবস্থাও করেছেন। তবুও সে পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তাই আরো দুই সপ্তাহ থাকার নির্দেশ দেন। হিমাংশু দুই সপ্তাহ থাকলে ঝর্ণাকেও দুই সপ্তাহ থাকা লাগছে। এখন ভাই বোনের রান্না খাওয়া তাদের সাথেই হচ্ছে। বেশির ভাগ সময় রান্না ঝর্ণাই করে। গোছগাছ, সুন্দর ভাবে পরিবেশন সবই সে করে। কর্মব্যস্ত চিন্তাশীল ডাক্তার নিজের স্বাস্থ্য চেহারা, প্রফুল্লতা হারায়ে পঁয়ত্রিশ বছর বয়সি পুরুষ সত্তর বছরের বৃদ্ধে রুপান্তরিত হয়েছিলেন! জীবন বোধ, ভুত ভবিষ্যত, আশা আকাঙ্খা জলাঞ্জলি দিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। ঝর্ণা এ বাড়িতে এসে দেখে ডাক্তার বাবু বেঁচে থেকেও জীবন বোধ হারিয়ে ফেলেছেন। সে মায়ের জাতি তার চোখে তা ধরা পড়ে। জগতের সব সন্তানের প্রতি অজান্তেই মায়ের খেয়াল আসে। হতে পারে সে কখনও মা, কখনও স্ত্রী, কন্যা বা ভগিনিরূপি। আর পুরুষদের সেবার মাধ্যমে সঠিক জায়গায় ফিরে আনাটাই নারীর কাজ। এই জন্যই নারী গৃহলক্ষ্মী। ঝর্ণা বাবুর শারীরিক মানসিক ও সামাজিক নিয়মানুবর্তিতার দিকে হাত বাড়িয়ে তার পরিবর্তন পরিবর্ধন করেছে। রাত এগারোটার মধ্যে ডাক্তারকে ঘুমাতে হয়। প্রতিদিন একটা করে ডিম খেতে হয়। সপ্তাহে কমপক্ষে দুইদিন মাংস, প্রতিদিন মাছ, সবজি, সকালে বিকেলে চেম্বারে যাওয়ার পূর্বে কোনো না কোনো নাস্তা খেতে হয়। রঙ্গিন টাইটফিট পোষাক পড়তে হয়। তার প্রচলিত সব ধারায় আমূল পরিবর্তন। অল্প দিনেই ডাক্তার বাবুর স্বাস্থ্য চেহারার মধ্যে একটা স্নিগ্ধ ভাব আসে। মনেও রঙ্গের কুঁড়ি ফুটতে শুরু করে। ঝর্ণাকে সঙ্গে করে নিজ ইচ্ছায় তিনি এখন যাত্রা গান শুনতে যান। সন্ধ্যার পর ডাক্তারের বারান্দায় গানের আসর বসে। গায়িকা ঝর্ণা বিশ্বাসের একনিষ্ঠ শ্রোতা ডাক্তার রাজকুমার বিশ্বাস তন্ময় হয়ে গান শোনেন। শ্রোতাও মনের অজান্তেই এক সময় গেয়ে উঠে,
মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী
দেবো খোপায় তারার ফুল।
ডাক্তারের এমন পরিবর্তন দেখে মা ভাই বৌদিরা বলাবলি করে, যে রাজকুমারকে খালি গায়ে দেখলে বলা যেতো তার শরীরে কয় খানা হাড় আছে! দুপুরে খেলে রাত্রে খেতো না। রাতে খেলে সকালে খেতো না। জামা লুঙ্গী না ছেড়া পর্যন্ত ফেলতো না। প্রয়োজন ছাড়া তার মুখে কোনো কথাই বের হতো না। এখন দেখছি সে গানও গায়! হাসে, গল্প করে, সুন্দর সুন্দর জামা লুঙ্গী পরে। স্বাস্থ্য বেশ হৃষ্ট-পুষ্ট হয়েছে। সর্বদা টিপ টাপ থাকে। এ কাজটা সেই মেয়েটাই করেছে। ঝর্ণা ছাড়া এসব সম্ভব ছিলো না। আমরা তো সবাই মিলে কত না চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও ভিতরে ভিতরে একেবারে মরে গেছিলো। মেয়েটাই ওকে স্বাভাবিক করেছে।
এসব বিষয়াদি নিয়ে ডাক্তারের অজান্তেই মা, ভাই, বৌদি, নগেনসহ দুই একজন শুভাকাঙ্খী প্রতিবেশিরাও আলাপ আলোচনা করে। সবাই বলে ঝর্ণা একটা আদর্শ মেয়ে। ডাক্তারের জীবনের পরিবর্তন ঘটায়েছে। একদিন সবার উপস্থিতিতে মা নগেনকে বলেন,
রাজকুমারকে ডেকে নিয়ে এসো। এর একটা বিহিত আমি করবই। নগেন চেম্বারে গিয়ে ডাক্তার বাবুকে বলেন,
জরুরী তলব! মায়ের আদেশ এখনই ভিতর বাড়ি যেতে হবে।
কি না কি ঘটেছে! দ্রুত তিনি ও ঝর্ণা মায়ের কাছে যায়। গিয়ে দেখেন মা'র সাথে অনেকেই বসে আছেন। ডাক্তার ও ঝর্ণা পাশে বসে। সবাই চুপচাপ। কেমন যেনো একটা ভাব গাম্ভীর্য বিরাজ করছে। সবার মুখে কথা আছে কিন্তু কেউ প্রকাশ করছে না। সহসা মা মুখ খুলে বলেন,
রাজকুমার, লোকে বলে, তুই ভালো ডাক্তার। তোর হাত যশ ভালো। এখন দেখছি তোর চেয়েও ভালো ডাক্তার আছে। যে ডাক্তার না হয়েও মনরোগ চিনে বুঝে আমার রাজকুমারকে রোগমুক্ত করেছে। দিয়েছে নতুন জীবন! আমরা সাবই মিলে শত চেষ্টা করে দীর্ঘ দশ বছরেও তা পারিনি। তাই আমি আর এই ডাক্তারকে হাত ছাড়া করতে চাই না!
এই কথা বলতে বলতে উঠে দাঁড়িয়ে ঝর্ণার হাত ধরে দাঁড় করান। এবং বলেন,
মা ঝর্ণা তোমার চিকিৎসায় আমরা সবাই খুব খুশি। তাই আজ হতে সারা জীবনের জন্য এই বাড়িটাই তোমার ডাক্তারী চিকিৎসার চেম্বার করে দিলাম। আমার অবুঝ রাজকুমারের চিকিৎসার দায়িত্ব তোমার উপর থাকল।
এই বলে রাজকুমারের হাতে ঝর্ণার হাত ধরিয়ে দেন। সাথে সাথে উপস্থিত সবার মুখ থেকে কথার পরিবর্তে উলুধ্বনি শব্দে মুখরিত হয়ে উঠে।

 

Page No 2