writerfair

ছান্দিক দ্বান্দ্বিক

chandik dandik

Ashamoni

প্রথম অংশ

ঢাকা ইউনির্ভার্সিটির দর্শন বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে নক্ষত্র, পল্লব ও মৃত্তিকা। নক্ষত্র কিছুটা চিন্তিত; পল্লব গাছে হেলান দিয়ে গাইছে,... 'তিন পাগলের হলো মেলা নদে এসে, তোরা কেউ যাসনে ও পাগলের কাছে...।' মৃত্তিকা খিচিয়ে উঠলো শালা গান গাওয়ার আর সময় পাচ্ছ না। পরীক্ষার ডেট দিয়ে দেবে এ মাসেই অথচ কিছুই পড়া হয়নি। মেয়েগুলো ভালো রেজাল্ট করে কান ধরে উঠ বস করাবে এবার। পল্লব উল্টে বলল, 'বাঞ্চত, তুই শালা গানের মাহাত্ম কী বুঝিস? চুপ শালা মুডটাই নষ্ট হলো।' পল্লব আবার ধরলো, আমি অপার হয়ে বসে আছি ওহে দয়াময় পারে লইয়া যাও আমায়...।' মৃত্তিকা এবার বিরক্ত হয়ে বলল, 'তুই অপার হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাক, আমি হলে গেলাম, শালা কি যে হবে, যত সব অনাসৃষ্ট আর কি?' মৃত্তিকা সত্যি সত্যি দ্রুত পা ফেলে চলে গেলো। পল্লব পেছন থেকে ডাক দেয়, 'মৃত্তিকা শোন।' মৃত্তিকা সে কথায় কর্ণপাত না করে চলেই গেল। নক্ষত্র এতক্ষণ কোন কথাই বলেনি, দাঁড়িয়ে দু'বন্ধুর বাক্যলাপ শুনছিলো; কথা বলতে তার ভালো লাগছিল না। তাছাড়া সে অকারণে দাঁড়িয়ে নেই। ঠিক এসময়ে সুদূর এখান দিয়ে হেটে যাবে টম বয়ের মত, মেয়েটি চারুকলায় পড়ে। কেন জানে না মেয়েটিকে তার বড় ভালোলাগে। পরনে জিন্স গায়ে হাফ হাতা শার্ট হাতে সিগারেট, নির্বিকার ভাবে হেঁটে যাবে। কোন কিছুই পাত্তা দেয় না, কেমন একটা ড্যাম কেয়ার ভাব। শ্যামবর্ণ স্বাস্থ্য একটু খারাপের দিকে তবে তার হরিণ শাবকের মত, বড় বড় চোখ দুটি বড় মায়াবী। চোখের দিকে তাকালে যেন ভেতরটা ক্রমশ শান্ত হয়ে আসে। নক্ষত্র বেশ কিছু দিন থেকে লেগে আছে কিন্তু বিশেষ কোন সুবিধা করতে পারে নি। বন্ধুরা তাই ঠাট্টা করে ওর নাম দিয়েছে সুদুরিকা। পল্লব ডাকে সুদূর নিহারিকা কিন্তু সেটা আড়ালেই। নক্ষত্রকে বন্ধুরা প্রায়ই বলে, 'ওটা কোন মেয়ে হলো? কি দেখলি ওর মধ্যে? পাগলামির তো একটা সীমা থাকা দরকার।' নক্ষত্র প্রতিবাদ করে না, নিরবে খোঁচাগুলো হজম করে যায়, কথার পিঠে কথা বলতে ও সে অতখানি পটু নয়, তাই ওরা খোঁচাখুচি করেও সুবিধা করতে পারেনা।
মৃত্তিকা আবার ভয়ংকর নারীবিদ্বেষী, নীট্সের দর্শন থেকে প্রায়ই উদাহরণ দেয়, 'একমাত্র পুরুষ মানুষই অতিমানব হবার যোগ্য, কোন নারী অতিমানব হতে পারেনা, কেননা সাহস, ধৈয, শক্তি, সামর্থ্য ও চারিত্রিক দিক থেকে অতি মানবের গুণসম্পন্ন হবার কোন যোগ্যতাই মেয়েমানুষের নেই।' পল্লবও কম যায় না। সাথে সাথে বলে, স্যাকা খেয়েছো তাই তোমার মাথাটাই অকেজো হয়ে গেছে। ওই ব্যটা নীট্‌ট্স ও তোর দলের লোক স্যাকা খেয়ে স্যাকারিন হয়ে গেছে।' নক্ষত্রের ভালো লাগে না। সব সময় মৃত্তিকার এই দর্শন কচলানো; অবার বলতেও পারে না, তোরা কি চুপ করবি আর বললেও ওরা শুনবে না নিশ্চিত। সুদুর প্রায় ওদের কাছাকাছি চলে এসেছে। পল্লব একটু জোরেই বলল 'ওই যে তোর সুদুর পুড়ি সুদুরিকা' সুদুরের কান অবধি পৌছাতে সুদুর দাড়িয়ে পড়ল এবং তীর্যকভাবে নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে রইল। নক্ষত্র যেন অসহায়ভাবে নিরুচ্চারে বলল, 'আমিতো কিছুই বলিনি, তুমি আমার দিকে ও ভাবে তাকিয়ে আছ কেন?' সুদুর নিশব্দে পা বাড়ালো গন্তব্যে। নক্ষত্র এবার বিরক্ত হয়ে বলল, 'শালা কথা না বলে তোরা থাকতে পারিস না? একজন চলে গেল আর তুই এখােেন দাড়িয়ে আছিস কেন?' পল্লব পাল্টা প্রশ্ন করলো, তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন?' নক্ষত্র বলল, 'তোকে কি সব বলতে হবে?' পল্লব রিপিট করল 'তোকে কি সব বলতে হবে?' এবার নক্ষত্র রেগে গেল বলল, 'তুই গাছেদের সাথে ঝগড়া কর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে' বলেই দ্রুত চলে গেল। পল্লব ঘড়ির দিকে তাকাল, হ্যাঁ সময় হয়ে গেছে; লগ্ন ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই এসে পৌছাবে।
পল্লব দাঁড়িয়ে ভাবছে মৃত্তিকা পরীক্ষার টেনশানে হলে ফিরে গেছে। নিশ্চয়ই লেখাপড়া করছে, নক্ষত্র এমনিতেই সবচেয়ে কম পড়ে, তবে যতটুকু পড়ে ওতেই রেজাল্ট ভালো করবে। মৃত্তিকা পড়াশুনায় ওদের তুলনায় একটু বেশী সিরিয়াস। নারী বা প্রেম নিয়ে তার ঔসুক্য বড় একটা নেই। একারণেই পল্লব লগ্নের প্রেম নিয়ে মাঝে মাঝে ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলে। নক্ষত্র সুদুরকে নিয়েও বলে, 'নক্ষত্র পাত্তা দেয় না, তবে সুদুরের প্রতি দূর্বলতাকেও লুকাতে পারেনা। সুদুর মেয়েটি যে আদৌ মেয়ে নয়। সারাদিন স্মোক করে বেড়ায়, চালচলন পুরুষের মত; অমন ছন্নছাড়া উদ্ভট মেয়ের পেছনে কেন ঘুরতে হবে?' নক্ষত্র সব শুনে যায় কিন্তু সময় হলে সুদুরের চলার পথে দাঁড়িয়ে থাকে। মেয়েটির প্রতি সে ভয় এবং দুর্বলতা একই সাথে লালন করে।
ঘাসফড়িং এর পাখনায় ভর করে যেন এলো লগ্ন। হেসে বলল 'কতক্ষণ? তা তোমার শোপেনহওয়ার, নীটসের চ্যালা কেথায়? আর আমাদের হার্টথ্রুব নক্ষত্র তিনিই বা কোথায়?' মৃত্তিকা ওর কথা বলার ধরনে হেসে ফেলল। বলল, 'ওরা সব চলে গেছে; পরীক্ষা সামনেতো।' লগ্ন আবারও বলল, 'তা তোমাদের ক্লিনটনের সাথে কি আজ মনিকার দেখা হয়েছে? আমাকে তো কিছু বল না, আমি একবার চেষ্টা করে দেখতাম।' পল্লব বলল, 'সব কথা বলতে হবে কেন? লেগে তো আছেই অনেক দিন থেকে। কাজের কাজ তো কিছুই হচ্ছেনা।' লগ্ন তাড়া দিল, 'চলো ওদেরটা ওদের বুঝতে দাও।' পল্লব একমত হয়ে বলল, 'হ্যা তাই চলো। আগে ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে নেই তাড়াতাড়ি হলে ফিরতে হবে। এই পরীক্ষা না থাকলে যে কী ভালো হত?' লগ্ন বললো, 'এতক্ষণে তবে সুবুদ্ধি হলো? সারা বছর হৈ হৈ না করে ক্লাস এবং সাজেশন প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন ফলো করলে ত এই টেনশনে পড়তে হয় না।' পল্লব কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বললো, 'নাও এখন আর দাদিবুড়ির মত জ্ঞান দিও না? এখন ওসব বলেও লাভ নেই।'
হাঁটতে হাঁটতে ওরা ক্যন্টিনে চলে এলো। অন্য দিনের তুলনায় আজ ক্যন্টিনে ভীড় কম। সম্ভবত পরীক্ষার পড়া নিয়ে সব ব্যস্ত। পল্লব বলল, 'কী খাবে? নুডুলস খাওয়া যেতে পারে। সন্ধ্যা তো হয়ে গেল আমার একটু শপিং এ যেতে হবে। আমার রুমমেট কঙ্কনের সাথে; ওর কিছু কেনাকাটা আছে।' পল্লব বলল, 'বেশ যাও তবে বেশী দেরি করোনা। রুমে ঢুকে ফোন দিও নাহলে টেনশান হবে। পড়ায় মন দিতে পারব না।'
ওরা দুজন মুখোমুখি বসে। লগ্ন কি যেন খুঁজে ফিরল পল্লবের চোখের মণিতে। এই খোঁজাখুঁজি চলছে চলবে নিরবধি। ছন্দের সাথে দ্বন্দ্বের অথবা দ্বন্দ্বের সাথে ছন্দের বোঝাপড়া। আজ যা প্রয়োজনীয় কাল তা অপ্রয়োজনীয়। আজ যা অনিবার্য কাল তা অনাবশ্যক। তবু আশা নিরাশার খেয়াঘাটে সবাই যাত্রী, সবারই তাড়া গন্তব্যে পৌছানোর। সকলেই জানে গন্তব্য নিশ্চিত কিন্তু সতত গন্তব্য বলে কিছু নেই। কোন এক অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক সংগোপনে টেনে নিয়ে যায় অচেনা ভবিতব্যের অজানা পথে। অসহায় মানুষ যন্ত্রের মত কেবল হেঁটে যায়। পল্লব কথা বলে উঠলো, 'সময় শেষ হয়ে আসছে। লগ্ন হল ছাড়তে হবে এই ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে ভাবলেই খারপ লাগে। এই পরিবেশ এই অনুষঙ্গ সব কিছু থেকে বিদায় নিতে হবে অথচ দ্যাখো এইতো সেদিন ভর্তিযুদ্ধে অপরাজিত সৈনিক বেশে বীরদর্পে ভর্তি হলাম ইউনির্ভাসিটিতে। তারপর কেমন করে জানি বছরগুলো চলে গেল বুঝতে পারিনি। এবার চাকরি যুদ্ধের প্রস্ততি; কী যে করব কিছুই বুঝতে পারছিনা।' লগ্ন বিরক্ত হয়ে বলল, 'আগে পরীক্ষাটা ভালোমত শেষ কর তারপর যখনকার চিন্তা তখন করলে হবে। আগেভাগে এত সব ভেবে কী লাভ?' পল্লব হতাশ হয়ে বলল, 'ভাবতে চাই না লগ্ন, তবু ভাবনা এসে যায়। নক্ষত্রের পরিবার বড়, আত্মীয় স্বজন অনেক বড় বড় অবস্থানে। ওর সমস্যা হবে না। মৃত্তিকাও তদ্রপ; চাকরি নিয়ে ওরা টেনশন করে না কিন্ত আমার কে আছে বলো? আমার জন্য কে সুপারিশ করবে বলো? আমারতো ও রকম ফিডব্যাক দেওয়ার কেউ নেই।' লগ্ন এবার ঝাঁকিয়ে উঠল, বলল, 'তোমার কারো ফিডব্যাক লাগবে না। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন যা করার তিনিই করবেন। তুমি শুধু হতাশ হয়ে তার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ো না। তাছাড়া তোমার রেজাল্টও ভালো ওদের থেকে। তুমি কোন অংশে কম নও।' পল্লব চুপ করে থাকে ভাবে মেয়েরা অনাবশ্যক তর্ক করে। অযৌক্তিক কথা বলে। কোনো প্রকার লবিং ব্যতিরেকে যে চাকরি হয় না, রেজাল্ট যত ভালোই থাক না কেন। লগ্ন বুঝেও কথার পিঠে কথা বলবে। লগ্নকে বলা হয় না, অভাব আর দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে না উঠলে জীবনবোধ স্বচ্ছ হয় না। পল্লবদের আর্থিক স্বচ্ছলতা কখনও ভালো ছিল না। নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালিয়ে এতদূর এসেছে। নক্ষত্র আর মৃত্তিকার পড়ার খরচ বাড়ি থেকেই আসে। নক্ষত্রের বাড়ি ঢাকার উত্তরায়। অভিজাত এলাকায়। পল্লব গিয়েছে সেখানে একাধিকবার। আর মৃত্তিকার বাড়ি সিলেট; ওদের আর্থিক অবস্থাও মন্দ নয়, নক্ষত্রের মত বড়লোক না হলেও। তবে নক্ষত্র খানিকটা পাগলাটে ধরনের মানুষ-চাল চলন এলোমেলো। অহংবোধের ধার ধারে না; নিদ্বিধায় সবার সঙ্গে মেশে। বিত্তবানদের মতো কোনো ভড়ংয়ের ধার ধারে না। কখনও গম্ভীর আবার কখনো শিশুর মতো। সব বিষয়ে মনোযোগী আবার কোনো বিষয়েই কেয়ার করে না এমন ভাব। তবে বেশকিছুদিন হলো একটা ব্যাপারে সে বড়ই নিষ্ঠ। ঘড়ির টাইম মেনেই সে সুদূরের অপেক্ষা করে। বন্ধুরা হাসি ঠাট্টা করলেও সেসব অগ্রাহ্য করে। পড়াশোনায় বেশ ভালো-রেজাল্টও ভালো। তবে পড়াশোনা নিয়ে তার তেমন মাতামাতি নেই। খুব যে বেশী পড়ে তাও না। বন্ধুরা মাঝে মাঝে তাকে উৎসাহ দেয়, এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে কী লাভ? তার থেকে প্রস্তাবটা দিয়েই ফেল; যা হবার হবে! না হয় একটা প্রেমপত্র লিখে দে। আমরা পৌঁছে দেব।
নক্ষত্র জানে এটা কেবল কথার কথা। প্রেমপত্র নিয়ে সুদূরের সামনে দাঁড়াবার সাহস কারো নেই। নক্ষত্র নিজেও খানিকটা দ্বিধান্বিত। চারুকলা ডিপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে সুদূর যখন সব পারিপার্শ্বিকতা অগ্রাহ্য করে সিগারেট হাতে নির্বিঘ্নে টানতে টানতে হেঁটে যাবে- এ দৃশ্য অবলোকন করে কোন ছেলের পক্ষে প্রেমপত্র হাতে সামনে দাঁড়াবার সাহস হবে না। সুদূরের চালচলনও বেশ ডেসপারেট। একটা উদ্ভট মেয়ের জন্য নক্ষত্রের এরূপ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা বন্ধুরা বেশ উপভোগ করে। কেউ কেউ পাগলামি দেখে মজাও পায়। কেউ কেউ আবার ভাবে বড়লোকের পোলার সৃষ্টিছাড়া খেয়ালছাড়া বিষয়টা আর কিছু নয়। নক্ষত্রের হোষ্টেলেও থাকবার প্রয়োজন হয় না। দিব্যি সে বাসা থেকে স্বচ্ছন্দে ক্লাস করতে পারে। পারসোনাল গাড়িও তার আছে। অথচ ওর স্বভাব চরিত্র আচার আচরণ একেবারেই বিপরীতমুখি। কবিতা লেখারও বেশ ঝোঁক আছে। তবে সেগুলো আদৌ কবিতা কিনা তা একমাত্র কাব্যপ্রেমিকরাই বলতে পারবেন। আর দুএকটা কদাচিৎ ছাপা হলে নক্ষত্র তখন খুশিতে গদগদ হয়ে বন্ধুদের দেখায়, পড়ে শোনায়। আরও একজনকে শোনাতে তার অদম্য ইচ্ছা হয়; তবে সে ইচ্ছাটা বাস্তবায়ন হয় না। আদৌ কোনদিন হবে কিনা তাও জানে না। তবুও নক্ষত্র অসীম ধৈর্য্য নিয়ে সুদূরের চলার পথে অপেক্ষা করে দিনের পর দিন। সুদূরকে তা বলা হয়ে ওঠে না-
সুদূর তুমি সুদূরিকা
জানি তুমি একা
নক্ষত্রের আল্পনা আকাশে তুমি অনন্ত যাত্রী।
নক্ষত্রের সহপাঠি অজন্তা; যেমন নম্র, তেমনি ভদ্র ও রুচিশীলা। ময়মনসিংহের মেয়ে। ওরই একমাত্র সহোদর বোন ইলোরা। বাসার সবাই ডাকে ইলা যে নামটি তাদের স্মরণ করায় নাচোলের বিপ্লবী ইলা মিত্রকে। ইলার স্বভাব চরিত্রও বেশ ডানপিঠে-অজন্তার একেবারেই বিপরীত। নক্ষত্রের সঙ্গে অজন্তা ইলার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল একদিন। ইলার সঙ্গে সেই সুবাদে ইউনিভার্সিটিতে দেখাসাক্ষাত হতো। মাঝেমধ্যে ফর্মাল কথাবার্তা-দেখা হলে ইলাই কথা বলতো, কেমন আছেন ভাইয়া। নক্ষত্র হেসে বলতো ভালোই। কোনো সমস্যা হলে বলো-সংকোচ করো না কেমন? ইলা মাথা নেড়ে সায় দিতো। অজন্তা মাস্টার্স শেষ বর্ষে যখন, তখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে চারুকলায় ভর্তি হলো ইলা। কথা প্রসঙ্গে নক্ষত্রই অজন্তাকে বললো, বোনকে চারুকলায় ভর্তি করিয়ে ওকে কি জয়নুল আবেদীনের চ্যালা বানাতে চাস? কী হবে ওসব পড়ে? অজন্তা বললো, সে কথা তুই ওকেই জিজ্ঞেস করে দেখিস। এর কিছুদিন পর নক্ষত্র জানতে পারে সুদূরের সঙ্গে ইলার বন্ধুত্বের কথা; অজন্তাই তাকে বলে। নক্ষত্রের পাগলামি অজন্তা জানতো। তাই একদিন হাসতে হাসতে বললো, খুব সুবিধা হবে না বন্ধু। ও হলো ময়মনসিংহের প্রবীণ বাম রাজনীতিবিদ শাহিদ শমসের আলীর কন্যা। সিরাজুল ইসলামের একমাত্র বোন। ওর ভাই কর্নেল সিরাজুল ইসলাম। আমাদের সঙ্গে ওদের পারিবারিক সখ্যতা। বুঝতেই পারছিস কারণটা ইলা। নক্ষত্রের এসব শুনতে ভালো লাগছিল না। মনে মনে ছক তৈরি করেছিল তাহলে ইলাকেই ম্যানেজ করতে হবে আগে। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব? অবস্থা যা তাতে নক্ষত্রের দুর্বলতার বিষয়টা ইলা জানে। আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইলা তাকে কোনো প্রকার ইঙ্গিত করে না। দেখা হলে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ছোট বোনেরা যে স্বাভাবিক আচরণ করে, ইলাও তাই করে। অজন্তা যদি তাকে সুদূর এবং ইলার বিষয়টা না বলতো, তবে সে হয়তো বড় ধরনের মিসটেক করে ফেলতো। ইলার মাধ্যমে সুদূরের সঙ্গে যোগাযোগ এটা বোধ করি সম্ভব নয়। বড় বোনের ক্লাশমেটের সঙ্গে ফরমাল ভদ্রতার দূরত্ব বজায় রেখে সে সব সময় কথা বলে। সেই কাঠকাঠ ভদ্রতা নক্ষত্র অতিক্রম করতে পারে না। নক্ষত্র বুঝতে পারে এই ধরনের মেয়েরা সবার সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশতে পারে না। তবে যাদের সঙ্গে মিশে তাদের খুব এন্টারটেইনমেন্ট করে। এই টাইপের মেয়েরা স্বভাবতই খুব সৎ হয়। একটা বেসিক সততা সব সময়ই এদের মধ্যে কাজ করে। যদিও কে কী ভাবছে সেটা নিয়ে তারা কখনও ভাবিত নয়। নক্ষত্র ভেবে ভেবে পায় না, কবে কখন সুদূর নামের মেয়েটি তার মধ্যে এমনভাবে বিস্তার লাভ করলো। মেয়েদের নিয়ে অতখানি উৎসুক্য তার ছিল না। পুরোপুরি উদাসীন না হলেও, তবে...
 

Page No 1