writerfair

বাবাকে নিয়ে

With father

Ziaur Rahman linkon

n/a

গ্রামের ওদিকটায় আর যাওয়া হয় না তেমন একটা, সময়ে অসময়ে যাওয়া হতো প্রায়ই। বাবা যখন অসুস্থ, প্রতিদিন শেষ বিকেলে যখন সূর্যটা ক্লান্ত দেহে ঘুমানোর পায়তারা করতো দিগন্তরেখায়, যখন পাখির দল ফিরতো তার আপন আপন  নীড়ে, আমিও তখন একরাশ ক্লান্তি নিয়ে ছুটে যেতাম, আমার আপন ঠিকানায়, যেখানে নাড়ি পোঁতানো আছে, যার আলো বাতাস শুষে নিয়ে তিলতিল করে বেড়ে উঠেছি আমি, সেই গ্রামে । 

অসুস্থ বাবাকে দেখে মনের ভিতরে হাজারো শঙ্কা, হাজারো ভয়। তার মুখের দিকে তাকানো, সে এক দুর্বিষহ যন্ত্রনা, বুকের ভিতরটা মোঁচর দিয়ে উঠে, হুহু করে জোয়ার নামে চোখের কোণ বেয়ে।

বড় ছেলে, তাই শত কষ্টেও কাঁদা আমার মানা, পাছে অন্যরা সাহস হারিয়ে ফেলে, এই ভয়ে। কালো চশমা পড়ে তা ঠেকিয়ে রাখার  বৃথা চেষ্টা, চোখের জল টপটপ করে ঝরে পরে।

তাঁর বেঁচে থাকার আকুতি ঘুমাতে দিতো না আমায়, দিবানিশি অজানা আতঙ্কে কেটে যেতো সময়। চিকিৎসার শেষ পর্যায়ে তিনি এখন, চোখের সামনেই তাঁর করুণ সমাপ্তি হতে চলেছে, হারিয়ে যেতে বসেছে একটি প্রজন্ম, পিতৃহীন হতে চলেছি, অথচ কতো অসহায়, কতো নিরুপায় আমি। 

আমার মাথার উপর ছাঁয়া দেওয়া বটগাছটা উঁপড়ে গেছে । ঝরে গেছে তার সমস্ত ডালপালা, যে শিকড় আমায় আঁকড়ে ধরেছিলো,

হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছিলো, কথা বলতে শিখিয়েছিলো, শিখিয়েছিলো স্বপ্ন দেখতে, আগলে রেখেছিলো বুক পেতে,  সে শিকড় আলগা হয়ে গেছে। সমস্ত বন্ধন ছিঁড়ে পাড়ি দিয়েছেন তিনি সুদূর পরপারে, সেখান থেকে আর ফেরা যায় না ফেরা হয় না। আমায় আর কেউ ডাকবে না, বলবে না -- বাবা একটু বাড়িতে আয়, পুকুরের মাছ ধরেছি, বড় মাছটা এসে নিয়ে যা, ছোটবেলায় যে তুই মাছের মাথা ছাড়া  ভাত খেতেই চাইতি না, 

বলবে না - এতো রাত করেবাড়ি ফিরিস কেন ? আমার দুঃশ্চিন্তায় যে ঘুম আসে না, বলবে না আর - মটরসাইকেলটা খুব সাবধানে চালাস, বড় ভয় লাগে,  যদি তোর কিছু হয়ে যায়, বাঁচতে পারবো না রে,

কত কথাই না  মনে পড়ে আজ। এখন পিচঢালা পথটা মাড়ি দিতে আর ভালো লাগে না, ভালো লাগে না গ্রামের বাড়ি যেতে। শূন্যতায় ভরে আছে , তার অনুপস্থিতিতে শ্মাশান যেনো সব । তাঁর হাতে লাগানো আম জাম,  জারুল, মেহগনি, কাঁঠাল, কমলা লেবু, কদবেল, আমড়া জবা তুলসি,  সবই যেন বিবর্ণ। খালি পড়ে আছে তাঁর চেয়ার, শুয়ে থাকা খাট, আলনায় পড়ে আছে তাঁর পড়নের পাঞ্জাবি লুঙ্গী গেঞ্জি, স্যান্ডেল জোড়া অবহেলা অযত্নে পড়ে আছে বারান্দার এক কোণে,  প্রতিটি ইট কাঠ দরজায় তাঁর ছোঁয়া লেগে আছে, অস্তিত্বের স্বাক্ষর নিয়ে, তাঁর ছায়া নয়, যেনো দাগ কেটে আছে  পুরো বাড়ি জুড়ে।  শুধু তিনি নেই, নেই তার উপস্থিতি। তবুও কেন জানি মাঝে মাঝে তার কণ্ঠস্বর শুনি -- “ বাবা এলি ” পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি, তিনি নেই, প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে চলে গেছেন, চলে যাবো আমি, আমরা সবাই ।

তবুও মন সায় দেয় না। বাবাকে মনে পড়ে এখনো , এখনো তার কণ্ঠ শুনি মাঝ রাতে চমকে উঠি আমি, কেঁদে উঠে মন, ভেঙে যায় বুক, বালিশ ভিঁজে যায় চোখের জলে, তাঁর শুন্যতা আমায়, কুড়িয়ে কুড়িয়ে মারে, তবুও আমার জীবন চলে  জীবনে নিয়মে…

Page No 1