সারাদিনের ক্লান্তি শেষে এইমাত্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে শুভ্র। বেশ আরাম বোধ হচ্ছে শরীরটাতে, গা মোঁচর দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে আছে সে। চোখ বন্ধ করতেই শ্বেতার কথা মনে হলো তার, সেই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই শুধুমাত্র সকালের শুভেচ্ছাটুকু বিনিময় হয়েছে তাদের মধ্যে, আর কোন কথা হয়নি। হবেই বা কেমন করে? কাজের ব্যস্ততায় শুভ্র মোবাইল অন করতে পারেনি, হয়তো শ্বেতা রেগে গেছে। হাতে মোবাইলটা নিতেই -----
" আর কোনদিনও কথা বলবো না তোমার সাথে, আমায় তুমি ইগনর করো, একটুও সময় দিতে চাও না, মোবাইল নাম্বারটা চেয়েছি তাও দাওনি, আড়ি আড়ি আড়ি,,,,, ধুমধাম করে মেসেস এলো শ্বেতার কাছ থেকে,,,
একটু হাসি পেলো শুভ্র'র, মেয়েটা তবে রাগতেও জানে ?হয়তো একটু হলেও ভালোবেসে ফেলেছে সে ; আমিও কি তার ভালোবাসায় এতটুকুও আটকে যাইনি ? তবে তার সাথে কথা না হলে, মনের ভিতর খচখচ করে কেন ? কেন তার মেসেস পাওয়া আশার তীর্থেরকাকের মতো চেয়ে থাকি, মোবাইল স্ক্রিনের পানে ? তাকে দেখার ইচ্ছে প্রবল হয়ে উঠে কেন, মরা গাঙ্গে উতালপাথাল জোয়ারের মতো, তবে কি আমিও শ্বেতাকে ভালোবেসে ফেলেছি, ---- --- মনে মনে ভাবে শুভ্র।
এই তো অল্পকিছু দিন হলো শ্বেতার সাথে শুভ্র'র পরিচয়, তাও আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে। সেদিন ফেসবুক অন করতেই শুভ্র একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পায়, নাম শ্বেতা, ছোট বাচ্চার একটা ছবি দিয়ে প্রোফাইল পিকচারের কাজটা সেরেছে সে। বন্ধুত্ত্বের অনুরোধ গ্রহন করে শুভ্র। সেদিনই তাদের মধ্যে কথার বিনিময়, তবে পুরোটাই মেসেঞ্জারে। শুভ্রকে হয়তো শ্বেতা দেখেছে,কারন তার প্রোফাইল পিকচারটা নিজের, কিন্তু শ্বেতাকে দেখা হয়নি শুভ্রর।
এরপর থেকে প্রতিদিন সময়ে অসময়ে কথা হতো তাদের, মান অভিমান চলতো নিয়ম করে। শুভ্র অবশ্য শ্বেতাকে দেখতে চেয়েছিলো, চেয়েছিল তার একটা ছবি, কিন্তু শ্বেতা রাজি হয়নি -- বলেছে আরও কথা হোক, পরিচয় হোক তারপর না হয়,,,,, তাই শুভ্রও ইচ্ছে করেই তার ফোন নাম্বার দেয়নি শ্বেতাকে।
কি করে শ্বেতার অভিমান ভাঙ্গাবো ----মেসেস পাওয়ার পর থেকেই ভাবছে শুভ্র। আচ্ছা ওকে রাগলে কেমন লাগে,,, ভাবতে ভাবতেই সেও একটা মেসেস পাঠিয়ে দেয় শ্বেতাকে ----
" আচ্ছা রাগলে কি তোমার
চিবুকদুটো লাল হয় ?
লাল হয় কি ঠোঁটদুটো !
ঝিলে ফোটা লাল পদ্মের মতো !
কিংবা চুলগুলো কি সব
খাড়া হয়ে যায়,
সজারুর কাঁটার মতো ?
নাকি নখগুলো সব ধারালো হয়
কাঠ কাটা করাতের মতো !
নাকি দাঁতগুলোসব
আওয়াজ তুলে কিড়মিড় করে!
পপকর্ন ভাঁজার মতো!
মনের ভিতরে কি
স্ফুলিঙ্গ টগবগ করে,
জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরীর মতো!
পা'দুটো কি নিসপিস করে,
চলে কি রেলগাড়ির মতো।
নাকি রাগের মাঝে ফুটে উঠে
তোমার অপরূপ সৌন্দর্য!
চোখে অগ্নিতাপ অথচ
মায়া ভরা মুখে খেলে কি
ভালোবাসার অপার খেলা!
খুউব দেখতে ইচ্ছে করে,,,,
- আমাকে যে রাগায়, মনে হয় তার পুরো শরীরে কামড়ে দেই ; শুভ্র'র মেসেসটা পেয়েই প্রতি উত্তর দেয় শ্বেতা
- তাই নাকি ?
- হুমমমম, একবার তোমায় কাছে পেলে দেখাতাম, রাগানোর মজা কেমন !!!
- তুমি তো দেখাই করতে চাও না, একটা ছবিও না, তবে কাছে পাবে কি করে? আর পেত্নীর মতো দাঁত দিয়ে আমায় কাঁমড়ই বা দিবে কেমন করে,,,
- রাগাবে না বলছি , তাহলে কিন্তু সারা জীবনেই দেখা পাবে না তুমি,
- তাই ? পারবে আমায় ছেড়ে যেতে ? শুভ্রর সরল প্রশ্ন ;
- পারবো না কেন ? তুমি আমার কে শুনি ?
- জানি পারবে না তুমি !
এই আমায় ছেড়ে যেতে,
হয়তো আমি তোমার কেউ নই,
তবে এ'কটাদিন তুমি মিশে গেছো,
আমার আত্মার সাথে,
হৃদপিন্ডের অলিন্দ নিলয়ে,
রানীর আসন পেতে দিয়েছি,
মনের অজান্তেই তোমায় করে নিয়েছি
জীবন সঙ্গীনি,
তাইতো কথা বলি দিবানিশি,
অচেনা তোমার সাথে,
পারবেনা তুমি আর,
আমায় ছেড়ে যেতে,
- তবে কষ্ট দিলে কেন?
অজানা আশঙ্কায় কেটেছে সারাদিন,
উথাল পাথাল করেছে মনের ভিতর,
কালো মেঘে ছেঁয়ে গেছে মন,
ঘন বর্ষা নেমেছে চোখে।
পথিকের বেশে পথ চলেছি আমি,
তোমার খোঁজে।
কোথাও পাইনি তোমায়,
সেই তুমি এলে,
আমায় কষ্ট দিয়ে,
- অসম্ভব সুন্দর করে কথা বলতে পারো তুমি
- সেতো তোমার কাছে শেখা শুভ্র। আচ্ছা এখন বলো সারাদিন কোথায় ছিলে? জানতে চায় শ্বেতা,,
- সত্যি বলতে কি, একটু বেশি ব্যস্ত ছিলাম আজ, তাই আসতে পারিনি নেটে, তুমি রাগ করো না প্লিজ, এমনটি আর হবে না দেখো,,
- খেয়েছো কিছু ? শ্বেতার প্রশ্ন-
- না, খেতে ইচ্ছে করছে না,
- সামান্যটুকু হলেও খেয়ে নাও, আমি রাখছি, বড় আপুর সাথে বাইরে যেতে হবে, আর হ্যাঁ, রাতে কথা হবে কেমন ? মোবাইল বন্ধ করো না যেন , ভালো থেকো, বলেই ওপাশ থেকে নেট বন্ধ করে দেয় শ্বেতা,,
ক্লান্তদেহে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে শুভ্রর চোখের পাতায়,, অপরিচিতা শ্বেতার কথা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে সে,,
Page No 1